শুক্রবার, ২৬ Jul ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

অবহেলায় ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ, স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর 

রাজধানীর উত্তরার নসট্রাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অবহেলায় নাদিম শেখ (২৮) নামের এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

 

উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ওই হাসপাতালে রোববার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। পরে উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

 

নাদিম শেখ গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলীর ইমার দিঘীর পাড়ের খোকন শেখের ছেলে।

 

হাসপাতালে খোঁজখবর নিয়ে ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাত ১টা ১২ মিনিটে নসট্রাম হাসপাতালে ভর্তি হোন নাদিম শেখ। চার দিনের মাথায় রোববার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মারা যান তিনি।

 

নাদিমের চাচা মোজাম্মেল হক গাজী  সাংবাদিক বলেন, ‘সকাল থেকে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। আমরা ডাক্তার খুঁজতে থাকি, সিস্টার (নার্স) খুঁজতে থাকি। কেউ আসে নাই। সকাল ১০টার পর ডিউটি ডাক্তার গিয়ে দেখছে। রোগীকে যে ডাক্তার দেখতেছিল, ডাক্তার মাসুম (মেডিসিন বিশেষজ্ঞ), তাঁকে ফোনে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। তারপর সাত-আটটা টেস্ট করায়। টেস্টের রিপোর্টে ব্লাডের রেড সেল ছিল ৫২। কিন্তু স্বাভাবিক রেড সেল থাকার কথা ছিল ৪০ থেকে ৪৫। ৫২ যখন থাকবে তখন তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে। কারণ সে যেকোনো মুহূর্তে সে স্ট্রোক করতে পারে। ব্রেন হ্যামারিংও হতে পারে।’

 

তিনি বলেন, ‘ওই সময় তাকে আইসিইউ সাপোর্ট না দিয়ে ওই অবস্থাতেই রেখে দিছে। কোনো মেডিসিন দেয়নি, কোন পদক্ষেপই নেয়নি।’

 

অভিযোগ করে মোজাম্মেল গাজী বলেন, ‘যখন এই অবস্থায় ব্লাডের রেড সেল বেড়ে গেছে, তখন হাসপাতালের লোকজন আইসিইউতে দিল না, মারা যাওয়ার পর আইসিইউতে দিয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারে নাই। তারা বলছে, সে (রোগী) হঠাৎ করেই ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গেছে। এখানে তো ট্রিটমেন্ট চলতেছিল, তাহলে কীভাবে হঠাৎ করে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা গেল?’

 

নাদিমের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনে জড়ো হোন স্বজনেরা। তাঁদের সঙ্গে গাজীপুরের কাউন্সিলর নুরুল হকও এসেছিলেন। একপর্যায়ে রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে থানা-পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

 

হাসপাতাল থেকে রোগীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় গাজীপুরের কাউন্সিলর নুরুল হক বলেন, ‘আমরা এখন লাশ নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে। কারও অবহেলা পেলে ব্যবস্থা নিবে। দুই তিন দিন পর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসব। যদি তারা সঠিক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

 

ঘটনাস্থলে থাকা উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রোগী বেঁচে থাকতে তাকে আইসিইউতে নেয়নি, মারা যাওয়ার পর আইসিইউতে নিয়েছে। রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজন ও হাসপাতালের লোকজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। পরে ৯৯৯–এর মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে।’

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের ম্যানেজার মাইনউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইসিইউতে নিয়েছিল, নিতে নিতেই রোগী মারা গেছে। আমাদের ২৪ ঘণ্টাই দুই জন ডাক্তার থাকে।’

 

স্বজনদের সঙ্গে মারামারির কারণে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি স্পটে ছিলাম না। তাই বলতে পারছি না।’

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com