রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
বাংলা সংগীত জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, গীতিকার ও সঙ্গীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জীবন অবসান। সারা দেশ জুড়ে পালিত হলো প্রেম দিবস অর্থাৎ Happy valentine’s day 2025. উত্তরা বি আর টি এ মেট্রো সার্কেল ৩ সংরক্ষিত সার্ভার রুমে হামলা চালাবার উদ্দেশ্যে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক পয়লা ফাল্গুন আজ বসন্ত  ভূরুঙ্গামারীতে হ্যান্ডকাফ সহ পালিয়ে যাওয়া দুই মাদককারবারী চট্টগ্রাম থেকে আটক। আইডব্লিওএমডি কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা  বহুবিশ্বাসের সম্প্রীতির নেটওয়ার্ক তৈরি করুন  ভ্যালেনটাইন’স ডে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের রদবদলে জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে জনগণ মেনে নেবে না: আমিনুল হক শান্তিরক্ষী মিশনে যেসব সদস্যমনোনীত হবেন না প্রাইম ব্যাংকের ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সেবা নেবে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস

আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর “শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার”

নিউজ দৈনিক ঢাকার কণ্ঠ 

মোঃ মোরসালিন পূর্বধলা 

ছিমছাম নীরব-নিভৃত প্রত্যন্ত এক গ্রামে জ্ঞানের দ্যূতি ছড়াচ্ছে “শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার”।নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের কাজলা গ্রামে ২০১৪ সালে ১৫ শতাংশ জমির উপর সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নিজের মায়ের নামে পাঠাগারটি স্থাপন করেন জ্ঞান অন্ত:প্রাণ মানুষ জনাব আনসার উদ্দিন খান পাঠান।পেশায় যিনি সদ্য সাবেক পুলিশ সুপার। আর বর্তমানে তিনি পুরোদস্তুর ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার।

স্বামী স্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু অর্থাৎ সেই ১৯৮৩ সাল থেকে নানান সময়ে কেনা ও উপহার হিসেবে পাওয়া বইগুলো নিয়ে নিজ বাড়ির এক কোনায় লাইব্রেরিটির যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক আনসার উদ্দিন খান পাঠান। যার সুফল এখন শুধু নিজ গ্রামের মানুষজনই পাচ্ছে না! বরং,শান্তিময় পরিবেশে মনকে একটু আনন্দের যোগান দিতে আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও প্রতিদিন ছুটে আসেন দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বইপোকা মানুষজন। একটু নীরবে অধ্যয়ন করতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আসেন চাকুরীপ্রত্যাশীরা।

পাঠাগারটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের(বিসিএস) অষ্টম ব্যাচ থেকে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামে সাধারণ এক পরিবারের সামর্থ্য দিয়েই যিনি লেখাপড়ার আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন , যাঁর দেখানো পথ ধরেই আমরা ভাইবোনেরা তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিতে পেরেছিলাম এবং জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করি;সেই মরহুমা মায়ের স্মৃতিতেই পাঠাগারটির নাম রাখি শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে গিয়েছি এবং এর থেকে অর্জিত সকল টাকা সঞ্চয় করে এই পাঠাগারটি গড়ে তুলেছি।’

সম্প্রতি লাইব্রেরিটির নিয়মিত ও দীর্ঘসময় ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের বি সি এস এর বিভিন্ন ক্যাডারে, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক ও সরকারি বেসরকারি নানান সুনামধন্য সংস্থায় চাকরি হওয়ার সুবাদে দূরদূরান্ত থেকেও ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য আসতে শুরু করেছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে প্রতি বছর ছাত্র ছাত্রীরা তাদের এসাইনমেন্টের জন্য এই পাঠাগারে আসে।সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় আনুসঙ্গিক সকল সুবিধা সংবলিত( সুশোভিত বসার আয়োজন,পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম,পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা প্রভৃতি) এই পাঠাগারটিতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে । পাওয়া যায় প্রতিদিনের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক,রয়েছে বিভিন্ন বয়সের পাঠকের জন্য মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক সাময়িকী, ম্যাগাজিন প্রভৃতি।

সামাজিক কর্মকান্ডেও প্রতিষ্ঠানটি পিছিয়ে নেই!প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে বিভিন্ন সময় সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শীতবস্ত্র ,খাবার বিতরণ করা হয়। ভবিষ্যতে পাঠাগারটিতে কম্পিউটার ট্রেনিং এবং মেয়েদের হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান জনাব আনসার উদ্দিন।

৪১তম বিসিএস থেকে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সারোয়ার জাহান শামীম সরকার বলেন, ‘ সাফল্যের দীপশিখা ছড়ানো এবং জ্ঞান চর্চা ও বিকাশের বিশাল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার। আমার মত বহু ছাত্রের চাকুরি প্রস্তুতির অন্যতম অনুসঙ্গ এই লাইব্রেরি। আমি এই পাঠাগার ও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

৪০ তম বিসিএস থেকে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানকারী মোঃ সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে নীরবে কাজ করে যাওয়া শাহেদা স্মৃতি পাঠাগার ও এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় আনসার উদ্দিন খান পাঠান স্যারের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো । করোনাকালীন শাহেদা স্মৃতি পাঠাগারে জীবনের সোনালী সময় কাটিয়েছি। এসপি স্যারের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ ও সহযোগিতা ছোট্ট এ জীবনে ঋণের খাতাটাকে আরো ভারী করেছে।’

শ্যামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বাবু গোবিন্দ বণিক বলেন, ‘আনসার উদ্দিন খান পাঠান আমাদের বিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থী। প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে আমি মাঝেমধ্যেই আমার শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই পাঠাগারে যাই।’

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com