শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০০ পূর্বাহ্ন
মনির হোসেন জীবনশ বিশেষ সংবাদদাতা :
জাতীয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, সমালোচক মাহমুদুর রহমান তরুন ছাত্র-জনতার কাছে অনুরোধ ও আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের কবর হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু সেটা যে চিরদিনের জন্য হয়ে যায়, এই কারনে আপনারা যারা লড়াই করেছেন যে ছাত্র-জনতা সমন্বয়ে লড়াই করেছেন তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আপনারা ছোটখাটো কারনে অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না এই বিপ্লবি ছাত্র-জনতার কাছে এই আহবান রাখি।
তিনি আজ শুক্রবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ ও বক্তৃতা কালে এসব কথা বলেন।
এসময় পুরো টার্মিনাল ও তার ভেরত বাহির লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো বিমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিল কড়া পাহারায়।
এর আগে তিনি আজ সকাল ৯ টা ১৯ মিনিটের সময় বিমানবন্দরে নেমে টার্মিনাল ২ দিয়ে বাহিরে বের হয়ে একটি মিনি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান।
এসময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে দৈনিক আমার দেশ পরিবারের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা সহ অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এসময় শাহজালাল বিমানবন্দরে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাবেক নগর সম্পাদক ও বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক বিএফইউজে সভাপতি এম, আব্দুল্লাহ, নাগরিক অধিকার বাংলাদেশ সংগঠনের সভাপতি মো: এনায়েন উলাহ ও সাধারণত সম্পাদক (অবসরপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান, দলের সিনিয়র সহসভাপতি মো: হান্নান মজুমদার প্রমুখ।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান ট্রাকে উঠে হাত নেড়ে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আমার মত করে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেছি। আপনারা
আমাকে আমার মত করে লড়াই করতে দিন। বিগত ১৬ বছর ধরে আমরা এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেছি। রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদ দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ (জামায়াত) বলেন এবং অন্যান্য দল বলেন তারা তাদের মত করে লড়াই করেছে। আর আমি আমার দেশ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আমার মত করে লড়াই করেছি । আমার লড়াই ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক ও কালচারাল লড়াই। আজকে আপনাদের সাথে এই বিষয়ে আমি দীর্ঘ আলোচনা করতে পারছিনা এর কারন আপনারা বুঝতে পারছেন। তবে আমি আশাবাদী জেল থেকে মুক্ত হবার পরে আরও বড় পরিসরে আপনাদের সাথে দেখা হবে। আপনাদের সাথে সেদিন আমি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতীয় আগ্রাসন এবং বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক লড়াই নিয়ে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব। পরিশেষে আজকে যারা কষ্ট করে বিমানবন্দরে আমাকে ফুলেল শুভেচছা জানাতে এসেছেন এবং আমি আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
কোটা আন্দোলনে শহীদ আবুসাঈদসহ সকল
শহিদদের স্বরন করে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের একজন বিপ্লবী আইকন হল আবু সাঈদ। সাঈদসহ সকল শহীদ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা তাদের কখনও ভুলবো না।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহমুদুর রহমান বলেন, আপনাদের নিকট আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা আমার অসুস্থ মায়ের জন্য দোয়া করবেন। সর্বশেষ কথা হল পরাজিত ফ্যাসিবাদ বিদেশে বসে, বিদেশি প্রভু (তার কোন বিদেশি বন্ধু নাই) তার বিদেশি প্রভু ও এজেন্টদের নিয়ে বিপ্লবকে নসাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এবং আপনাদের বন্ধু হিসেবে আপনাদের মধ্যে কোন অনৈক্য না আসে এবং কোন রকম অনৈক্যর ফাটল ধরা। আবার ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে না পারে এদিকে খেয়াল রাখবেন।
বিপ্লবি ছাত্র-জনতার কাছে আহবান রেখে
মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশে ফ্যাসিবাদের কবর হয়েছে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু সেটা যে চিরদিনের জন্য হয়ে যায়, এই কারনে আপনারা যারা লড়াই করেছেন যে ছাত্র-জনতা সমন্বয় লড়াই করেছেন সবাই ঐক্যবদ্ধ্য থাকুন। আপনারা ছোটখাটো কারনে অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না এই বিপ্লবি ছাত্র-জনতার কাছে এই আহবান রাখি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। যার ফলে ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর আমি মাতৃভূমিতে ফিরতে পেরেছি। আমাকে উদ্ভট ও মিথ্যা মামলায় সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।
তার নামে আরও অনেক মিথ্যা মামলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার মা গুরুতর অসুস্থ।
তাই তাকে দেখতেই আমি আজ ঢাকায় দ্রুত চলে আসি। দুই দিন মায়ের সঙ্গে থাকতে চাই। আগামী রোববার আমি আদালতে যাবো। আমার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। এমনও হতে পারে আমাকে জেলে যেতে হতে পারে। আপনারা বিচলিত হবেন না। আমি আইনিভাবে সবকিছু মোকাবিলা করবো।
জানা গেছে, ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ কুমিল্লায় জন্ম গ্রহন করেন মাহমুদুর রহমান। তার আনুমানিক বয়স (বয়স ৭১) বছর। পেশায় তিনিবএকজন বাংলাদেশী প্রকৌশলী এবং ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক, লেখক, সমালোচক। দৈনিক আমার দেশ সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসাবে ২০০৮ কর্মজীবন শুরু করেন।রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
(বিএনপি) দাম্পত্য সঙ্গী ফিরোজা খান
পিতা-মাতা মাহমুদা বেগম (মা)।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫০ বারের ও বেশি মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় অভিযুক্ত করে দল এবং সরকারী কর্মকর্তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার দায়ে সাজা প্রদান করেছে।
কর্মজীবনে মাহমুদুর রহমান ব্রিটেনের গ্যাস কোম্পানি ব্রিটিশ অক্সিজেন কোম্পানিতে অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি মুন্নু সিরামিক, ডাকান ব্রাদার্স, বেক্সিকো গ্রুপ, পদ্মা টেক্সটাইল গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। জাপানেও সুনামের সহিত কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে মাহমুদুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি আর্টিসান সিরামিক লিমিটেড নামে কোম্পানি গড়ে তোলেন। এটিই সিরামিকে দেশের প্রথম প্রযুক্তিগত “ব্রেক থ্রো” ও চীনা বোন কারখানা ছিল। ২০১৩ সালে তিনি আর্টিসান বিক্রি করে দেন।
২০০১-২০০২ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাহমুদুর রহমান কর্মজীবন (রাজনীতি) ও জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে পাচঁ আই (“five ‘I’s”) থিওরি প্রচলন করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজ হল মেঘনা এনার্জি লিমিটেড, কাচঁপুরের জন্য বিদেশী বিনিয়োগ আনয়ন। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগ ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৪ সালে জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৪৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধিদল আওয়ামীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২০ জন নিহত ও ৩০০ অধিক আহত হয়, ফলে সরকার বিরোধী হরতাল লাগাতার চলতে থাকে। মাহমুদুর উভয় পক্ষের সমালোচনা করে বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য হুমকি, এবং এর জন্য সরকারি নিরাপত্তা প্রদান করা উচিত। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক অস্থিরতার জের ধরে এর প্রতিবাদ স্বরুপ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিকট পদত্যাগ পত্র জমা দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা প্রত্যাখ্যান করলে তার চুক্তির দুই বছর বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব সমাপ্ত করেন।
২০১৯ সালে তিনি মুসলিম বাঙ্গালীদের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পাদনা
(The Political History of Muslim Bengal) নামে শাহী বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাটি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি দৈনিক পত্রিকা। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ মোসাদ্দেক আলী ফালু যৌথ অংশীদারত্বের মালিকানায় পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সাল থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরু হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাহমুদুর রহমান পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। কাগজে প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পত্রিকাটি অনলাইনে প্রকাশ চালু রাখলেও ২০১৬ সালের ৪ঠা আগস্ট অনলাইন সংস্করণটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে মাহমুদুর রহমান লন্ডন থেকে ওয়েবসাইটটি পুনরায় চালু করেন।