সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
লেবার পার্টির আলোচনায় নজরুল ইসলাম খান দল গোছানো বা বন্ধু জোগাড়ের জন্য ভোট বিলম্বিত হতে পারে না মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে উত্তরা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতিকে রাজধানীর দক্ষিণখানে সাংবাদিক বদরুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, ডিসি কার্যালয় স্মারকলিপি জমা রাজধানী,তুরাগ থানায় ৩৩২ পিছ ফেন্সিডিল সহ একজন আটক। লালমনিরহাটে ১০কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার ১ ঢাকা ১৮ সাবেক এমপি হাবিব হাসানের ছোট ভাই নাদিম হাসান গ্রেফতার আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিলের প্রস্তুতি সময়, বিএনপি নেতার ছেলেসহ গ্রেফতার ৮ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আওয়ামীলীগ নেতা আলম খান গ্রেপ্তার,এলাকাবাসীর আনন্দ প্রকাশ ‎ রাজধানী উত্তরা সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তরায় মানববন্ধন প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিথ্যা ধর্ষন মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

নানা অভিযোগের ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে তায়কোয়ানডোর রানা

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের (বিটিএফ) সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা একনামে পরিচিত, অথচ নিজের প্রকৃত নাম রণজিৎ দাস। কক্সবাজারের সুইপার কলোনিতে জন্ম । পরিচয় বদলে মুসলিম সেজে তিন দশকের বেশি সময় ধরে দখলে রেখেছেন দেশের একটি ক্রীড়া ফেডারেশন। মূলত কক্সবাজারের হরিজন কলোনীর রণজিৎ দাস কোনো আনুষ্ঠানিক ধর্মান্তর ছাড়াই পরিচয় বদলে হয়ে যান “মাহমুদুল ইসলাম রানা”।

জাতীয় পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত সনদ ও দলীয় সুপারিশপত্রে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ মার্শাল আর্ট কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান মনি একটি মামলা করেন, যা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হস্তক্ষেপে বর্তমানে “ফ্রিজ” অবস্থায় রয়েছে।

সম্প্রতি একাধিক তদন্ত এবং ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রানার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি, রাজনৈতিক সহিংসতায় সম্পৃক্ততা, ক্রীড়া পরিষদের এডহক কমিটিকে ৫০ লাখ টাকার ঘুষ প্রস্তাব, বিদেশে মানব পাচার, নারী খেলোয়াড়দের ব্ল্যাকমেইল সহ WT, Kukkiwon, ATU ও IOC-এর লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ব্র্যান্ডিং ও তার ভূয়া শিক্ষাগত সনদপত্রের প্রকাশ। ঈদের আগে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে নিজের পছন্দের এডহক কমিটি গঠনের জন্য জোর চেষ্টা চালান রানা। অভিযোগ রয়েছে, এর জন্য তিনি একাধিক দপ্তরে ৫০ লাখ টাকার ঘুষের প্রস্তাব দেন।

তবু সার্চ কমিটি বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সেই কমিটি অনুমোদন করেনি। ঈদের পর থেকে আবারও নানামুখী যোগাযোগ ও তদবিরে নেমেছেন তিনি। লক্ষ্য একটাই—ফেডারেশন যেন কোনোভাবেই তাঁর হাতছাড়া না হয়। এমনকি জুলাই আন্দোলনের সময় অস্ত্র মজুত করে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। রানা ছিলেন ‘জুলাই বিপ্লব’-এ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী কমান্ডার। ২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’ এর উত্তাল সময়ে পল্টন ও ক্রীড়া পরিষদ এলাকায় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় তায়কোয়ানডো প্রশিক্ষিত খেলোয়াড়দের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রানার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের খাদ্য, আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও মজুদ করা হয় এবং তিনি নিজে ক্রীড়া ভবনের সিঁড়ির নিচে বসে হামলার নির্দেশনা দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে নাম এসেছে—জয়, পারভেজ হাসান, কারুজ্জামান রোকন, ইমরান রানা, রহিম শিকদার এবং যুবলীগ নেতা মজুমদারসহ অন্তত ২০ জনের বেশি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের। রানার সাথে ছিল তিন বিশ্বস্ত সহযোগী মোসলেম মিয়া, মোঃ পলাশ মিঞা ও সুসমিতা ইসলাম— যারা এখনো সামাজিক গনমাধ্যম ফেসবুকে বলে থাকেন, “অস্ত্র জমা দিছি, ট্রেনিং জমা দেই নাই।”৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনিও লাপাত্তা হয়ে যান। পরে টাকা দিয়ে বিভিন্ন জনকে ম্যানেজ করে খেলার আড়ালে বেরিয়ে আসেন। আর বিপ্লবী হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছাত্রদের পক্ষে গরম করেন। অন্যদিকে রানার ব্যক্তিগত জীবনও কম বিতর্কিত নয়।

চারটি বিয়ের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর প্রথম স্ত্রী তায়কোয়ানডো ফেডারেশন ভবনেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অনেকেই একে আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন। একইভাবে তায়কোয়ানডো খেলোয়াড় কামরুল ইসলামের আত্মহত্যার পেছনেও রানার মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও সরকারি নির্দেশ অমান্যর অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্মারক নম্বর ৩৪.০০.০০০০.০৭১.৯৯.০০৮.২০.১২২৮ অনুযায়ী, তৎকালীন সভাপতি আওয়ামী নেতা কাজী মোরসেদ হোসেন কামাল পলাতক অবস্থায় বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের (বিটিএফ) এর পদ থেকে তিনি অব্যাহতি পান।

অথচ ২০ নভেম্বর ফেডারেশনের প্যাডে সেই অপসারিত সভাপতির জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে Kukkiwon (দক্ষিণ কোরিয়া) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে কোনো স্মারক নম্বর ছিল না, যা ফেডারেশন গঠনতন্ত্রের (ধারা ৮.৪ ও ৯.২) লঙ্ঘন। আইনজীবীদের মতে, এটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪৬৮ ধারায় সরাসরি প্রতারণা ও স্বাক্ষর জালিয়াতি। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে তার মনোনীত ৮ থেকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই ব্যক্তি পদ দখল করে আছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—নজরুল ইসলাম বাবুল, মোঃ মশিউর রহমান চৌধুরী, শাহীনুল হক মার্শাল, মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোল্লা, মোসলেম মিয়া, পলাশ মিঞা, সাইদুর রহমান স্বপন, সুমন দে, বিমল সমাদ্দার, রুজিনা সুলতানা, মঞ্জুর হোসেন বেপারী, মোঃ কামরুজ্জামান, কাজী আবুল খায়ের, মাহবুবুর রহমান আলমগীর ,এস এম এমরান হোসাইন , মোঃ সুজাদুর রহমান, মোঃ মাসুদ রানা, মোঃ নুরুল ইসলাম, রাশেদুজ্জামান, মোঃ রাসেল উদ্দিন মজুমদার , এস এম এ শাহজাহান প্রমুখ। ফেডারেশনের এ সকল ব্যক্তি রানার সমস্ত অপকর্ম জায়েজ করতেন এবং কিছু পেয়ে আরও উৎসাহিত করতেন। অনেকেই বলছেন, এই দীর্ঘস্থায়ী নেতৃত্বই ফেডারেশনের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা রুদ্ধ করে দিয়েছে এবং স্বৈরাচারী অসৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।

অভিযোগ জমা পড়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, ঈদের পর রানার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। ইতোমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গিয়েছে—যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (BOA), দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক), ওয়ার্ল্ড তায়কোয়ানডো সদর দপ্তর (Kukkiwon), এশিয়ান তায়কোয়ানডো ইউনিয়ন (ATU), আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC)।

রানার দাবি—এই সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মসূত্রে মুসলিম এবং তাঁর পিতার নাম বদিউল আলম, মায়ের নাম মরিয়ম আলম, ঠিকানা বিকে পাল রোড, কক্সবাজার। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, “সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।”

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com