নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের এক উদ্বেগজনক অংশ জড়িয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়া ও বেটিং অ্যাপে, যা ধীরে ধীরে তাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক শান্তি এবং ভবিষ্যত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মোবাইল ফোনে এক ক্লিকেই পাওয়া যাচ্ছে এই বিষাক্ত আসক্তির রসদ, যার নাম “অনলাইন জুয়া”।
সহজলভ্য প্রযুক্তি, ভয়ানক ফাঁদ
Play Store ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে হাজার হাজার গেমিং অ্যাপ, যেগুলো জুয়ার ছদ্মবেশে বিপুল আর্থিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি করছে। তরুণেরা প্রথমে খেলার ছলে প্রবেশ করলেও পরে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কিছু অ্যাপে প্রথম দিকে “জেতানোর অভিনয়” করে ব্যবহারকারীদের আরও টানার জন্য প্রোগ্রাম করা থাকে।
একজন শিক্ষার্থীর গল্প
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজধানী উত্তরা, দোহার নবাবগঞ্জ , পরিবারের তরফ থেকে এ ধরনের একাধিক তথ্য মিলেছে, পারিবারিকভাবে অশান্তির অভিযোগ এবং আত্মহত্যা অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে দ্রুত রাষ্ট্রীয়ভাবে সতর্কতা না করা হলে অনলাইন জোয়ার চক্র অনেক পরিবারে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
“প্রথমে ২০০ টাকা দিয়ে খেলি। তিনবার জিতেছিলাম। এরপর বড় অঙ্কে খেলতে গিয়ে হারতে থাকি। শেষে বাবার পাঠানো টিউশন ফি পর্যন্ত খরচ করে ফেলি। এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”
পারিবারিক ভাঙন বাড়ছে
অনলাইন জুয়ার কারণে অনেক পরিবারে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব, পারিবারিক সহিংসতা ও বিচ্ছেদ। কিছু ক্ষেত্রে তরুণেরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে—যেমন চুরি, প্রতারণা ও ঋণের ফাঁদে পড়া।
আইন ও নজরদারির ঘাটতি
বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এর সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ নেই। কিছু জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক বেটিং অ্যাপ VPN ব্যবহার করে সহজেই এক্সেসযোগ্য, যা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন জুয়া একটি “সাইলেন্ট অ্যাডিকশন”। এতে হতাশা, অবসাদ, আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। যাদের মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ মনোভাব বা আর্থিক টানাপোড়েন আছে, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সমাধানের পথ কী?
প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করা
তরুণদের সচেতনতা বাড়ানো
পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাউন্সেলিং
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নজরদারি বৃদ্ধি
উপসংহার:
অনলাইন জুয়া এক ধরনের নীরব ভাইরাস, যা প্রযুক্তির ছায়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের শিরায় শিরায়। এই ভয়াবহ আসক্তি বন্ধে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, সামাজিক প্রচার ও সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ। নইলে ভবিষ্যতের প্রজন্ম হারিয়ে যাবে ভার্চুয়াল ফাঁদের অতল গহ্বরে।