শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
উড়িষ্যা থেকে কলকাতা ফেরার পথে ,ব্রীজ থেকে উল্টে পড়লো যাত্রীবাহী বাস যুক্তরাজ্য শেফিল্ড আওয়ামী লীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল উত্তরা সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে আন্তরিক ধন্যবাদ” নাটোর বড়াইগ্রামে ভুয়া এএসআই আটক ঢাকার এক বাড়িওয়ালা অনন্য নজির স্থাপন করলেন স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন: খসরু চৌধুরী এমপি-১৮ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির সহস্রাধীক পরিবারের মাঝে ইঞ্জিঃ মোহাম্মদ হোসাইনের ঈদ উপহার বিতরণ  ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে পুষ্পস্থবক বিনম্র শ্রদ্ধা প্রতারক হুমায়ুন কবির ও তার পরিবার

রাজধানী দক্ষিণখানে ২৬ লাখ টাকার জন্য স্ত্রীকে হত্যা করে কানাডায় পালান স্বামী: পুলিশ

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর 

এরই মধ্যে হত্যার পরিকল্পনা করেন , হত্যার আগেই করা হয় গর্ত, বেছে নেওয়া হয় বৃষ্টির সুযোগ, মেয়ে ও ভাতিজিকে পাঠানো হয় সিনেমা দেখতে, তুরাগ নদীতে ফেলে লাশ গুমের পরিকল্পনা ।

কানাডাপ্রবাসী নারী আফরোজা বেগম দেশে ফেরেন ৩ মাস আগে। এরপর গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে একটি জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাংক থেকে টাকাও তোলেন ২৮ লাখ। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর স্বামী আশরাফুল আলম (৪৮)। তিনি ২ লাখ টাকা খরচও করে ফেলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর বাকি ২৬ লাখ টাকাও আত্মসাতের উদ্দেশে স্ত্রীকে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান কানাডায়।

রাজধানীর দক্ষিণখানে খুন হওয়া আফরোজার বেগমের হত্যার পেছনের কারণ এমনটি বলে জানান দক্ষিণখান থানার উপরিদর্শক (এসআই) (এসআই) রেজিয়া খাতুন। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ভুক্তভোগী প্রবাসী নারীর ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় মামলা করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ওই নারীর স্বামী আশরাফুল আলমের বাবা শামছুদ্দিন আহম্মেদ (৭৯), ভাই সজিব আলম (৪৪), ভাইয়ের স্ত্রী তাহমিনা বাসার (৪২) ও খালা পান্না চৌধুরীকে (৫২)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণখান থানার এসআই মোসাম্মত রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আফরোজা দেশে ফিরেই গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। সেখানে তার একটি জমি পছন্দ হয়েছিল। তার বাবাও জানায়, জমিটি কিনতে পারলে তাদের জন্য ভালো হবে। সেই জমিটি কোটি টাকা দিয়ে কেনার জন্য কথা দিয়েছিলেন আফরোজা। পরে ঘটনার ৫-৬ দিন আগে ঢাকায় আসেন তিনি। জমি কেনার জন্য হত্যাকাণ্ডের তিন চার দিন আগে ব্যাংক থেকে ২৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন। যার দুই লাখ টাকা ঘাতক স্বামী খরচ করে ফেলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে বাকি ২৬ লাখ টাকার হাতিয়ে নেওয়ার জন্য শুক্রবার রাতে বৃষ্টি চলাকালে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে গুম করে ফেলে রাখে।’

 

এসআই মোসাম্মত রেজিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘এরপর আফরোজা বেগমকে পাওয়া না যাওয়ায় তার ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম দক্ষিণখান থানায় গত সোমবার (২৯ মে) একটি নিখোঁজ জিডি করেন। জিডির পর তদন্ত শুরু হয়। পরের দিন মঙ্গলবার আশরাফুল আলমের বাসায় গেলে তার স্বজনরা জানায়, সে বনানীতে গিয়েছিল। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে বনানীর চারটি রেস্টুরেন্টে খোঁজখবর নিয়ে ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ভুক্তভোগী আফরোজা সেখানে যাওয়ার প্রমাণ মেলেনি। অতঃপর তার স্বামী ও স্বামীর স্বজনদের ওপর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে সেখানে চারজন সোর্স লাগিয়ে রাখি।’

 

‘কৌশলে আশরাফুল আলমের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে ও পরিবারের স্বজনদের বাসায় কথা বলি। তারপর তারা একপর্যায়ে স্বীকার করেন, আফরোজা বেগমকে বটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে মাটির নিচে পুঁতে রেখে দেওয়া হয়েছে। তারপর সেখানে বালু ফেলে উঁচু করা হয়েছে। পরে আশরাফুল আলমের ভিডিও কলে দেখানো জায়গার মাটি খুঁড়ে আফরোজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে আশরাফুল প্রবাসে পালিয়ে গেলেও তার বাবা-ভাই, খালা ও ভাই বউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।’

 

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আশরাফুল আলম ও তার স্বজনেরা আমাকে এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা নগদ অফার করেছিল। সেই সঙ্গে আমার দুজন লোককে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে কানাডায় নিয়ে স্যাটেল করে দেওয়ার কথা বলেছিল। তাদের কথায় টোপ ফেললে আফরোজা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করে ও লাশটি রাতের আধারে তুলে নিয়ে তুরাগ নদীতে ফেলে গুম করার অফার করে। এতে রাজি হলে তারা আমার কাছে সবকিছু স্বীকার করে। হত্যাকাণ্ডের তিন-চার দিন আগে লোক নিয়ে এসে গর্তটিও করেছিল। পরে সেই গর্তেই তাকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এতেই বোঝা যায় তাকে পরিকল্পপনা করে খুন করা হয়েছে।’

 

রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে আরও বলেন, ‘নিহত আফরোজার মরদেহ উদ্ধারকালে তার মাথার পেছনে একটি, ঠোঁটে একটি, গলার বাম পাশে দুটি ও পিঠে একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া হয়। আফরোজার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছে স্বজনেরা।’

 

অপরদিকে দক্ষিণখান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আতিকুর রহমান রিপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আফরোজা ও আশরাফুলের মাঝে তর্ক বিতর্ক করছে। তখন আশরাফুলের ভাই রুমে ল্যাপটপে ব্যস্ত ও ভাবি রান্না করছিল। চিৎকারের শব্দ পেয়ে তারা মনে করতে শারীরিক আকাঙ্ক্ষা মিটাতে ব্যস্ত। কারণ তারা ইউরোপের স্টাইলে চলাফেরা করত। স্বামী স্ত্রী যখন-তখন যা তা করত, আশপাশের লোকজনের দিকে তাকাত না।’

 

আতিকুর রহমান রিপন আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেলে আফরোজা, তার মেয়ে অন্নেছা ও আশরাফুলের ভাতিজি তানিশার বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আফরোজা না দিয়ে অন্নেছা ও তানিশাকে পাঠিয়ে দেয়। ওই রাত ১১টার দিকে সিনেমা শেষ হওয়ার পর বাসায় ফেরার সময় আশরাফুল তাদের ফোন দিয়ে এক ঘণ্টা পর আসতে বলে। ওই সময় বাইরে হালকা বৃষ্টিও হচ্ছিল। বৃষ্টির সময়টাকেই হত্যার উপযুক্ত সময় হিসাবে বেছে নেয় আশরাফুল। কারণ আশপাশের লোকজন বৃষ্টির মাঝে কিছুই বুঝতে পারবে না। পরে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে কম্বল দিয়ে রুম মুছে নালায় ফেলে দেয়। অপরদিকে পূর্বে করে রাখা গর্তে মাটি চাপা দিয়ে দেয়।’

 

নিহতের স্বজনরা জানায়, গত শুক্রবার নিহতের বাবা তার মেয়েকে দেখতে আসে। ওই দিন থেকেই আফরোজা বেগম নিখোঁজ হন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কিন্তু তবুও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদিকে রোববার বিকেলে নিহতের মেয়ে অন্নেছাকে নিয়ে তার স্বামী কানাডায় চলে যায়। পরে সোমবার এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন আফরোজার ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম। জিডি দুই দিন পর ঘাতক স্বামীর বাড়ির আঙিনা থেকে আফরোজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

 

নিহতের বাবা মো. আতাউল্লাহ মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক বছর পূর্বে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক আমার মেয়ে ও আফরোজা বেগমের সঙ্গে আশরাফুল আলমের কানাডায় বিয়ে হয়। গত তিন মাস পূর্বে তারা নাতনি অন্নেছাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসে। পরে তাদের কাবিন নামা করা হয়। বাংলাদেশে এসে মেয়ে আশরাফুলের সঙ্গে দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ার জামাইয়ের বাসায় থাকত। সব সময়ই জামাই আফরোজার সঙ্গে থাকত। যার কারণে আমার মেয়ে আমাদের সঙ্গে ঠিকমতো সুখ দুঃখের কথাও বলতে পারত না। গত শুক্রবার মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে জানায় কয়েক দিন পর তারা সবাই কানাডা চলে যাবে।’

শুক্রবারই আফরোজার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। তাই আমায় শনিবার দেখতে আসতে বলে। সেই কথা অনুযায়ী কিন্তু আমি ঢাকার উত্তরায় এসে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি কিনি। তারপর আমার মেয়েকে অনেকক্ষণ ফোন দেই। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করে না। অন্যদিকে জামাইয়ের মোবাইল নম্বর না থাকায় ছেলেকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। সেই সঙ্গে জামাইকে ফোন দিতে তাকে বলি। পরে জামাই এসে আমাকে সেখান থেকে বাসায় এসে নিয়ে যায়।’

 

আতাউল্লাহ মণ্ডল বলেন, ‘বাসায় গিয়ে আফরোজাকে দেখতে না পেয়ে সে কোথায় জানতে চাই। প্রথমে আশরাফুল আলম ও তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, পাশের একটি বাড়িতে ঘুরতে গেছে। কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে গেলেও মেয়ে না আসাই আবার জিজ্ঞাসা করি। তখন তারা বলেন, মেয়ে বনানী গেছে। পরে মেয়ে জামাই তাকে নিয়ে আসার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। জামাই রাত ১০টায় বাসায় আসার পর তাকে মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আপনার মেয়ে আসবে না। আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিবে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা নির্মমভাবে খুন করে তার লাশ মাটিতে পুঁতে রেখে আমায় নানাভাবে ঘুরাচ্ছিল। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। এমন শাস্তি চাই, যেন আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।’

 

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com