মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
আজ স্বর্গীয় সতিন্দ্র লাল দাশ গুপ্তের ৯তম মৃত্যু বার্ষিকী সরিষাবাড়ীতে নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগে দুই আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার সাংবাদিক হয়রানি মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তরায় মানববন্ধন  জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন গাছা থানা কমিটির অনুমোদন উড়িষ্যা থেকে কলকাতা ফেরার পথে ,ব্রীজ থেকে উল্টে পড়লো যাত্রীবাহী বাস যুক্তরাজ্য শেফিল্ড আওয়ামী লীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল উত্তরা সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে আন্তরিক ধন্যবাদ” নাটোর বড়াইগ্রামে ভুয়া এএসআই আটক ঢাকার এক বাড়িওয়ালা অনন্য নজির স্থাপন করলেন

জীবনযুদ্ধে লড়াই করে সেরা করদাতা দুই সহোদরের গল্প

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রংপুর কবি কুসুম কুমারি দাস যে ভবনা নিয়ে লিখেছিলেন ”আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে” সেই ভাবনার বাস্তব রুপ রংপুরের দুই সহোদর তানবীর ও তৌহিদ হোসেন। পৃথিবী নামক সময়ের মহাসমুদ্রে জীবন নামের ঢেউকে যারা দুলিয়েছেন পরতে পরতে। দীর্ঘ সংগ্রাম, চেষ্টা, অধ্যাবসায় আর সততার বলে বলিয়ান হয়ে তারা আজ প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসায়ীক সফলতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসেবা দেশপ্রেম সবকিছুর মিশেলে এই দুইভাই যেনো কবি নজরুল কবিতার সেই বীর যার ‘চির উন্নত মমশীর’।

চলতি অর্থবছরের মহানগর পর্যায়ে তরুণ ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হয়েছেন তানবীর হোসেন আশরাফি ও তৌহিদ হোসেন। তানবীর আশরাফী প্রথমবার হলেও তৌহিদ হোসেনের জন্য এই রাষ্ট্রীয় সম্মান টানা পঞ্চম বার। তাদের জীবনের বাঁকে বাঁকে বদলে যাওয়া রঙের স্পর্শে আজকের রঙিন অর্জনের অতীতটা বেশ ফ্যাকাসে। শৈশব কৈশোরে জীবনে ভোরবেলায় রক্ত ঘাম একাকার করে লড়ে যাওয়া দুই ভাইয়ের জীবনের গল্পটা কিছুটা ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। সেই ব্যতিক্রম গল্প আর সংগ্রামের অধ্যায়টি বেশ প্রেরণাদায়ক সঙ্গে হৃদয়স্পর্ষীও বটে।

রংপুর অঞ্চলের এক সম্ভ্রান্ত মুসুলিম ব্যবসায়িক পরিবারে ১৯৮৪ সালের ৮ ডিসেম্বর তানবীর হোসেন ও ১৯৮৭ সালের ১০ ই মে জন্ম গ্রহন করেন তৌহিদ হোসেন। রংপুরের জুম্মা পড়ার বাসায় সাফায়েত হোসেন ও ইশরাত বেগম দম্পত্বির কোল আলোকিত করে জন্ম নেয়া দুই ভাই বেড়ে ওঠেন শহুরে পরিবেশে ধর্মীয় ও পারিবারীক অনুশাসনে। একান্ত আলাপচারিতা মুখর সন্ধায় তানবীর আশরাফি জানান তাদের পরিবারের হাতেই তাদের শিক্ষা ও সৎতার ভীত গড়ে উঠেছে। তারই কন্ঠে উঠে এলো তাদের পরিবারের গৌরোবজ্জল অতীতের আলাপ। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল ১০ বছর সাফায়েত হোসেন ছিলেন রংপুর অঞ্চলের সব চেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স ও মোটরসাইকেল ব্যবসায়ি। স্টেশন রোডের হোসেন ব্রাদার্স ইলেক্ট্রনিক্সের নাম তখন রংপুর জুড়ে। সেই সুবাদেই পারিবারিক আর্থিক আভিজাত্যে বড় হতে থাকেন তানবীর ও তৌহিদ।

সেই ৯০ দশকে রংপুরের বাইরেও সাফায়েত হোসেনের বেশ কয়েকটি শাখা। এরই মধ্যে সৈয়দপুর এবং জলঢাকা ব্রাঞ্চের ম্যানেজাররা পুরো ব্যবসায় নামিয়ে দেন ধ্বস। সেই ধ্বসে একেবারেই পুঁজি হারিয়ে ফেলেন সাফায়েত হোসেন। শুরু হয় তানবীর ও তৌহিদদের পরিবারে আর্থিক দৈন্যদশা। ব্যবসায়িক লোকসানের টেনশনেই সাফায়েত হোসেন ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ব্রেন স্টোক করে ভর্তি হন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

৭ দিন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসেন বাসায়। কিন্তু তাকে তাড়া করে বেড়ায় লোকসানের বিষয়টি। আবারও ১৭ দিনের মাথায় তিনি ব্রেন স্টোক করেন। এরপর শয্যাশয়ি হন। অর্থনৈতিক ভাবে আর উঠে দাড়াতে না পারলেও এখনো অসুস্থ শরীর নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় ৫ সন্তানসহ সাফায়াতের সংসার চলতে থাকে দোকান থেকে পাওয়া ভাড়ার টাকায়। খুব দৈন্যদশার মধ্যে চলতে থাকে সংসার।

ব্যবসায়িক লোকসানের কারনে সব ফিঁকে হয়ে যায় পরিবারটির। একরকম বাধ্য হয়েই তখনি জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন দুই ভাই।

জীবনের চড়াই উৎরাই এর যেখানে শুরু সেখানেই আরম্ভ হয় তানবীর ও তৌহিদের ব্যবসায়ীক পথচলা। শুরুটা ফুফা নাইয়ার আজম এর হাতধরে যিনি ছিলেন একজন পরিচিত মোটর সাইকেল পার্টস ব্যবসায়ী। প্রাথমিকের পাঠ শেষ হতেই মা ইশরাত বেগমের অনুরোধে ফুফা নাইয়ার আজম প্রথমে দ্বীমত করলেও পরবর্তীতে পার্টস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেন তানবীর ও তৌহিদ হোসেনকে।

সেই ছোট বয়সেই ব্যবসার জটিল হিসাব না বুঝায় ফুফার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার প্রতিটি উপজেলায় ফুফার সাথে যাওয়াই ছিল তানবীর ও তৌহিদের কাজ। বিনিময়ে দৈনিক এক ভাইয়ের ভাগে জুটতো ১০০ টাকা করে। পালাক্রমে সেই কাজ দুইভাই করেছেন অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত। একদিকে ফেরী করে পার্টস বিক্রী অন্যদিকে পড়ালেখাও চলতে থাকলো সমানতালে।

অস্টম শ্রেনিতে উঠার পর ফুফার কাছে যন্ত্রাংশের দাম কেটে নিয়ে বিক্রি শুরু করেন তানবীর ও তৌহিদ। ১৩ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ দর কেটে শুরু হয় প্রথম দিনের ব্যবসা। সেই যন্ত্রাংশ মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ি ও বড় দরগায় বিক্রি করে প্রথম দিনে ১ হাজার ১৮০ টাকা মুনাফা করে মায়ের হাতে তুলে দেন দুজনে। এভাবে এক বছর ফুফার কাছ থেকে যন্ত্রাংশ ক্রয় করে বিক্রি করে বছর ঘুরতেই পুঁজি দাড়ায় দেড় লাখ টাকায়।

এরপর ফুফার সহযোগিতায় যশোর ও ঢাকা থেকে মহাজনদের কাছ থেকে মাল ক্রয় করে এনে জেলায় জেলায় উপজেলায় উপজেলায় ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন জীবনযুদ্ধে অটল ও অবিচল দুই যোদ্ধা।

একান্ত আলাপে তানবীর আর তৌহিদ হয়ে উঠলেন আবেগআপ্লুপ। হৃদয়ের কোঠরে জমাটবাঁধা না বলা কথাহগুলো যেনো গুমরে উঠলো ছাঁইচাপা আগুনের মত। একে একে দুই ভাই বললেন, তাদের জীবনের অজস্র সংগ্রাম থেকে গুটিকয়েক ঘটনা। যেগুলো এখনো নাড়া দেয়ে তাদেরর স্মৃতীর মনিকোঠায়।

তৌহিদ হোসেন জানান, একদিন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মালামাল বিক্রি করে সৈয়দপুরের বাস ধরার জন্য স্ট্যান্ডে আসি। দেখি শেষ গাড়িটিও ছেড়ে দিচ্ছে।

তখন এক মন ওজনের মালামালের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে বাসের পেছনের ছাদের উপরে ওঠার সিড়িতে লাফিয়ে উঠি। ওই বাসটিতে ছাদেও জায়গা ছিল না। খাচা ভর্তি মাছ ছিল। বাস রাস্তায় গিয়ে ব্রেক কষলে সেই মাছের পানি মাথাসহ সারা শরীরে পরে ভিজে যায়। এভাবে বার বার ভিজে ভিজে সৈয়দপুর আসি।

সেখান থেকে রংপুর আসার জন্য আরেকটি বাসে উঠি। কিন্তু আমার শরীরের মাছের আঁশটে গন্ধ পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা আপত্তি করলে তারাগঞ্জে এসে সুপারভাইজার আমাকে নামিয়ে দেয়। বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার পর সেদিন মাঝ পথে খুব কেঁদেছিলাম।

আলাপের সন্ধায় তানবীর আশরাফিও খুলে বসেন তার স্মৃতীর থলি। গুমরে ওঠা হৃদয়ের আয়না হয়ে ছলছল করছিল তার চোখ। বলছিলেন তার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের রাতের ঘটনা।২০০১ সালে আমি ছিলাম কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। পার্টস কিনতে গিয়েছিলাম যশোরে। ইচ্ছে ছিল দিনের মধ্যে ফিরে এসে রাতভর পড়াশোনা রিভিশন দিয়ে পরদিন যাব পরীক্ষাকেন্দ্রে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেদিন একে এক সবগুলো বাস মিস করে আর ফেরা হয়নি রংপুরে। পরে রাতের ট্রেনে উঠে পড়ি কিন্তু সিট আর মেলে না। বসে পড়ি ট্রেনের মসজিদের কামরায়। পার্টসের ব্যগে থাকা বই বের করে শুরু করি পরীক্ষার পড়ালেখা। যখন রংপুরে ফিরি তখন সকাল ৮টা পেরিয়েছে। বাসা গিয়ে ফিরে এসে পরীক্ষা ধরতে পারা সম্ভব হত না বলে মেডিকেল মোড়েই পার্টসএর ব্যগ রেখে ফ্রেস হয়ে বসে পড়ি পরীক্ষায়। আর পরীক্ষা শেষ করে চলে ফেরি করে পার্টস বিক্রী। মিঠাপুকুর, শটিবাড়ি, বড়দরগা থেকে পার্টস বিক্রির টাকায় বাসার বাজার করে তবেই ঘরে ফিরি। ফলাফল বের হল, পাস করলাম”। এভাবেই আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধীও বাড়তে থাকলো বলে যোগ করেন, তানবীর হোসেন।

এদিকে সুমি অটোর নামকরণের স্মৃতি জানতে চাইতেই যেনো স্মৃতীকাতর হয়ে পড়েন তৌহিদ হোসেন, শুরু করেন আজকের সুমি গ্রুপ এর শুরুর দিনের গল্প। বলেন ২০০০ সালের দিকে নীলফামারীর ডোমারে পার্টস ডেলিভারি দিতে যাই। কিন্তু দোকানদার বায়না ধরলেন ম্যামো ছাড়া মাল নিবেন না। এতে হতচকিত হয়ে যাই। পাশে চোখ পড়তেই দেখি একটি প্রিন্টিংয়ের দোকান। তাৎক্ষণিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের আদরের ছোটবোন সুমির নামে সুমি অটো নাম দিয়ে ম্যমো তৈরি করে তাকে ডেলিভারি দেই। ডোমার থেকেই আজকের সুমি অটোর উৎপত্তি।

তৌহিদ হোসেন বলেন, আমার পিঠের ব্যাগে পার্টস ছাড়াও ক্লাসের নির্দিষ্ট বই ছিল সময়। সময় পেলেই রাস্তায়, ট্রেনে, দোকানে, পড়ালেখা করেছি। দশম শ্রেনীতে ১৮৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ১ম স্থান অধিকার করেন বলেও জানান তৌহিদ হোসেন।

সমানতালে পড়াশোনা ও ব্যবসা চলতে থাকে এই দুই সহোদর। সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার বছর ব্যবসার আকার বাড়তে থাকে। ২০০৪ পুঁজি দাঁড়ায় ১০ লাখ টাকার ওপরে। এরমধ্যে বড় বোনের বিয়েতে ৬ লাখ টাকা খরচ হবার পর পুঁজি ঘাটতি হয়ে যায়। আবারও শুরু কঠোর পরিশ্রম। ২০০৬ সালে রংপুর শহরের জিএল রায় রোডে সুমি অটো নামে মোটর সাইকেল পার্টসের দোকান দিয়ে স্থায়ী ব্যবসা শুরু করেন তারা। এসময় পুঁজি সংকটের কারনে অন্যান্য বাবসায়িদেও সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিলে না বলে জানান তৌহিদ হোসেন।

তৌহিদ বলেন, সেই সময় ব্যাংক লোনের জন্য চেষ্টা করি। প্রথমে আমি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করি আমরা। লোনের চূড়ান্ত নথি অল্প বয়সের কারনে বাতিল করেন ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। খুব আহত হই। বাসায় এসে কাঁদি। কিন্তু মা আমাদের সাসস দেন। মায়ের সাহসে এগুতে থাকি।

২০০৭ সালে সেই দোকানের পুরো দায়িত্ব নেন বড় ভাই, তানবীর হোসেন আশরাফি। আর তৌহিদ আবারও শুরু করেন ফেরি করে পার্টস বিক্রির সর্বোচ্চ হোলসেল ব্যবসা। ব্যবসার পরিধি বাড়ায় পরের বছর ২০০৮ সালে ব্রাক ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা নিজে এসে যোগাযোগ করে লোন দেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর বাবা মায়ের দোয়ায় পরের পথটা মসৃন হয়ে আসে বলে মন্তব্য দুই সহোদরের।

তানবীর তৌহিদের হাতে ১০ বছর মোটর সাইকেল পার্টসের পাইকারী ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে উত্তরের ষোল জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায়। এরপর ২০১২ সালে সেনা কল্যান ট্রাস্ট পরিচালিত জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ডিলারশীপ নিয়ে ৪ টি অটো দিয়ে রংপুরে শুরু হয় তাদের ইজি বাইকের ব্যবসা।

উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করায় ২০১৬ সালে চায়না থেকে সরাসরি মোটর সাইকেলের পার্টস ও ইজি বাইক যন্ত্রাংশ আমদানি শুরু করে সুমি অটো সেন্টার। তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০০৭ সালে যে ব্যাংক আমাদের লোন দেয়নি ২০১৮ সালে আমি হই সেই ব্যংকের সেরা বিভাগীয় গ্রাহক। পরবর্তীতে বিভিন্ন সেক্টরে সম্প্রসারিত হতে থাকে তাদের বনিজ্যের আকার। বর্তমানে রংপুরে তাদের প্রতিষ্ঠিত সুমি অটো, সুমি অটো সেন্টার, ইসরাত আশরাফী ছাত্রী নিবাস, সুমি কমিউনিটি সেন্টার, রয়ালটি মেগামল সবচেয়ে আধুনিক ও রুচিশীল পোশাক ও প্রশাধনীর বিক্রয়কেন্দ্র, সুস্বাদু মুখরোচক খাবার রেস্টুরেন্ট ও কনফারেন্স সেন্টার রয়েলটি ফুড আড্ডা, তানবীর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত তাওহিদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দেশের অন্যতম সেরা ব্যটারি ব্রান্ড হিসেব সুনাম কুড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীক জীবনে সফলতার পাশাপাশি মানবসেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন রংপুরের এই দুই তরুণ আইকন। অর্থ উপার্জন এবং তার সঠিক ব্যবহার এর মানসিকতা তাদের আসিন করেছে উচ্চ আসনে। রংপুরের পিছিয়ে পড়া মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায় গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েও তৌহিদ হোসেন এখন একজন উদিয়মান স্পোর্টসম্যান। আর তানবীর হোসেন সুনাম কুড়িয়েছেন সমাজেসেবায়।

তানবীর আশরাফি বলেন, আমার পৈতৃক নিবাসের আশেপাশে রংপুরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার বাস্তবতায় ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মিছিল, মিটিং, আন্দোলন সংগ্রামসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রবীণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আপোষহীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। ফলশ্রুতিতে কৈশোরেই আমার মননে রোপিত হয়েছিল গণমানুষের অধিকার আদায়ের বীজ।

তিনি বলেন, আমার ছাত্র রাজনীতির এক দশকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দল মত নির্বিশেষে ছাত্রজনতার হৃদয়ে ইতিবাচক রাজনীতির সঞ্চার করেছে।
২০১১ সালে কাউন্সিল ও সফল সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে ছাত্র রাজনীতির দায়িত্ব তুলে দিয়ে সামাজিক সংগঠন “বাংলার চোখ” এর মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন তানবীর হোসেন। কোনো রাজনৈতিক পদে না থাকা সত্বেও কখনই রংপুরসহ আপামর জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়েননি তিনি। রংপুরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক এমনকি বন্ধুপ্রতিম ও ভাতৃপ্রতিম রাজনৈতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতেও অংশ নেয়ার মাধ্যমে তানবীর হোসেন প্রমাণ করেছেন সুস্থ ধারার সহাবস্থানের রাজনীতিতে তার বিশ্বাস।

তানবীর হোসেন একাধারে রংপুর বিভাগ বাস্তবায়ন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীসহ গণমানুষের বিভিন্ন দাবীতে রংপুরের রাজপথে সর্বদা সরব।

সামাজিক, সাংষ্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও ব্যবসায়ীক বিভিন্ন সংগঠনের নিতীনির্ধারনী পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন রোটারিয়ান তানবীর হোসেন। বর্তমানে তিনি মোটরসাইকেল পার্টস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির রংপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগর শাখার ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রংপুর জেলা ও মহানগর হাজী কল্যাণ সংস্থার, সাধারণ সম্পাদক এবং রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা নির্বাহী সদস্য।

এছাড়া রংপুর প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী, মানবতার বন্ধন ও নর্থ বেঙ্গল ট্যুরিজম ক্লাব এর আজীবন সদস্য হিসেবে কাজ করছেন তানবীর হোসেন।

একইসঙ্গে এক্স ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশন বেকা রংপুর ইউনিট এর সহ-সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সংগঠন বাংলার চোখ ও তানবীর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তিনি। ছাত্রজীবনে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি।

অন্যদিকে তৌহিদ হোসেন রংপুরের একজন উদিয়মান গলফার এবং টেনিস খেলোয়াড়। এছাড়া বিভিন্ন ইনডোর গেমে ব্যপক পারদর্শীতা অর্জন করেছেন তিনি। তানবীর আশরাফি বাবা-মা কে নিয়ে ২০১৪ সাল ও তৌহিদ হোসেন মাকে নিয়ে ২০১৯ সালে পালন করেছেন হজ্বব্রত। এছাড়া ব্যবসায়ীক ও পারিবারীক সফরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করে অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করেছেন সমৃদ্ধ।

গত ২০২১-২২ কর বছরের জন্য দেশের ১১ সিটি করপোরেশনের ৭৭ জনকে সেরা করদাতা মনোনীত করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ১৯ ডিসেম্বর সবার নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যেখানে রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তৌহিদ হোসেন ও তানবীর হোসেন আশরাফি। তাদের এই অর্জনে উচ্ছসিত রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

তানবীর ও তৌহিদ মনে করেন, ইচ্ছের সাথে কঠোর পরিশ্রম এবং সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে চেষ্টা করলে সফলকাম হওয়া যায়। দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবল আকাঙ্খার কথাও উঠে আসে তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায়।

ব্যক্তিজীবনে তানবীর হোসেন ঘর বেঁধেছেন জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত কন্ঠশিল্পী মাহমুদা আক্তার মিতুর সঙ্গে। তারা এখন এক পুত্র ও এক কন্য সন্তানের জনত জননী। তাদের ঘর আলোকিত করা দুই সন্তান মুনতাসীর ও ইলমা। তৌহিদ হোসেনও ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের জনক তাসকিন ও তানজীম। তার সহধর্মীনী সাবা পারভিন নেহা একজন নারী উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ী স্বামীদের ব্যস্ততম জীবনে দুই পুত্রবধু মিতু ও নেহা সমালান পরিবারের সকল ধরোয়া আয়োজন। আর তাদের স্নেহ আর ভালবাসার চাদরে আবৃত করে রাখেন তানবীর তৌহিদের বাবা-মা সাফায়েত হোসেন ও ইসরাত বেগম।

একথা ঠিক যে মানুষের ইচ্ছার সঙ্গে কর্মের সংযোগ না হলে সফলতাকে আলিঙ্গন করা অসম্ভব। কিন্তু কর্মের সঙ্গে আকাঙ্খা আর তার সঙ্গে যদি যুক্ত হন একজন সহযোদ্ধা তবে পথ যত দূর্গম হোক তা পাড়ি দেয়া সহজ। তানবীর হোসেন আশরাফি আর তৌহিদ হোসেন যেমন একে অন্যের সহযোগী ঠিক তেমনি তারা সহযোদ্ধাও বটে। তাদের এগিয়ে চলার পথে যে বিনয়, বাবা মায়ের আনুগত্য আর স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস এগুলোই তাদের জীবনের আকাশে সাফল্যের মেঘ হয়ে ঝরেছে। তাদের এই অর্জনের গল্পে যেমন মিশে আছে ত্যগ আর আবেগ তেমনি মিশে আছে লক্ষের পথে অটল ও অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত। এ যেনো কবি সুকান্তের দৃঢ় উচ্চারণের বাস্তবায়ন জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার- তবু মাথা নোয়াবার নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক ঢাকার কন্ঠ
© All rights reserved © 2012 ThemesBazar.Com
Design & Developed BY Hostitbd.Com