সংবাদ শিরোনাম
পিসিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত: সভাপতি কাজী মজিবর রহমান ও মহাসচিব মোঃ শাব্বির আহমেদের দায়িত্ব গ্রহণ. বিজিবি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের  সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি ঘোষণা : মো: কেফায়েত উল্লাহ- সভাপতি ; নূরুল আবছার ভূঁইয়া-সেক্রেটারি দুমকি উপজেলায়, মোটরসাইকেল–-অটোবাইক সংঘর্ষে চালক নিহত, আহত ১।। ফয়জুর সভাপতি, নাজমুল সম্পাদক বড়াইগ্রামে গ্রামীণ শাখা ডাকঘর কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কমিটি গঠন তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিনে উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ আগামীকাল ২১ শে নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ‍দিবস! সাম্প্রতিক আগুনে পুড়ছে দেশ, আতঙ্কে মানুষ: এই সন্ত্রাসের শেষ কোথায়? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষপাতদুষ্ট ও অস্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া দেশে আইনের শাসনকে ব্যাহত করবে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে প্রথম দুমকি উপজেলা।। 

আগামীকাল ২১ শে নভেম্বর বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ‍দিবস!

admin / ১৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

নিউজ দৈনিক ঢাকার কন্ঠ 

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

মূখবন্ধঃ

কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা সবটুকুই সেই মহান সত্তার জন্যে, যিনি নিখিল জগতের রব। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এবং আমাদেরকে দেখবার, শুনবার, চিন্তা করবার ও বুঝবার মত মহান নিয়ামত দান করেছেন। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার মত বিদ্যা-বুদ্ধি ও মেধা-জ্ঞান মানুষের মন মগজে প্রক্ষিপ্ত করেছেন এবং ইচ্ছা শক্তির আযাদীর মত মহান আমানত দান করেছেন।

অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে, মানবতার মুক্তির দূত ও বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবা আজমাইন এবং সমস্ত মু’মিন নর-নারী’র উপর।

এ মুহুর্তে স্মরণ করছি বাংলাদেশের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান-কে সেই সাথে আরো স্মরণ করছি, সেইসব বীর সেনানীদের, যারা বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা ও রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য, এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বজ্রকণ্ঠে শপথ নিয়ে, যে সকল বীর যোদ্ধাগণ শত্রুদের হাতে শাহাদৎ বরণ করেছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে, যে সকল পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক সহযোদ্ধা ও সহকর্মী ভাইগণ এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ২০২৪ সালে জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুতাত্থানে যে সকল ছাত্র-জনতা এবং নারী-শিশু নিজেদের তাজা প্রাণগুলি অকাতরে মানব কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন, আমরা তাদের বিদেয়ী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। এবং তাদেরকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে জান্নাত প্রাপ্তির জন্য মহান রবের নিটক বিনয়াবনতচিত্তে প্রার্থনা জানাচ্ছি।

মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকাঃ

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামীলীগকে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর না করে, পাকিস্তান সরকার একগুয়েমী ও বৈষম্যমূলক আচরণে তালবাহানা শুরু করে। এমতাবস্থায় ১৪ই মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকা, সৈয়দপুর এবং সান্তাহারে মুজিববাহিনীর লোকজন বিহারীদের উপর আক্রমন করে প্রায় ৬-৭ হাজার বিহারীকে হত্যা করে, ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখে ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী বাঙ্গালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবলীলায় দিশেহারা জাতির আশার আলোর মশাল জ্বালিয়ে তৎকালীন সময়ে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা দিলে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় বিপ্লবী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ-কর্মকর্তাগণ, সেনা ও বিমান কর্মকর্তাগণ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার যুবক, আবাল বৃদ্ধ বণিতা। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সশস্ত্র সংগ্রামের রূপ ধারণ করে।

এমতাবস্থায় তৎকালীন পূর্বপকিস্তানে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিারোধ যুদ্ধ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং আপামর জনগণ যে যেখানে পেরেছে, সেখান থেকেই বিদ্রোহ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উচ্চ মনোবল ও তীব্র দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রতিরোধের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেট জেলার তৎকালীন হবিগঞ্জ মহকুমার সীমান্ত সংলগ্ন তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ডাকবাংলোয় বাঙ্গালী সামরিক কর্মকর্তাদের এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী এবং প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনীগুলোর কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সভায় সেদিন থেকেই বাংলাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনীগুলোকে ‘মুক্তিবাহিনী’ নামে অভিহিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার কর্তৃক ১২ এপ্রিল’১৯৭১ তারিখে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানী পিএসসিকে কেবিনেট মিনিস্টার মর্যাদাসহ বাংলাদেশ ফোর্সেস এর কমান্ডার-ইন-চীফ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১২-১৫ জুলাই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তর কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে বাংলাদেশের সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে বাংলাদেশ ফোর্সেস সদর দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়াও সভায় লে. কর্নেল (অব.) এম এ রবকে বাংলাদেশ ফোর্সেসের চীফ অব স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চীফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্তি দেওয়া হয়। কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সকল বিচ্ছিন্ন সংগঠনকে কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় নিয়ে আসেন, এবং ফোর্সেস সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে অপারেশনাল নির্দেশনা প্রণয়ন করেন। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর বিদ্রোহী বাঙ্গালী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য এবং তৎকালীন ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও নির্বাচিত সাধারণ জনতার সমন্বয়ে গঠিত হয় নিয়মিত বাহিনী বা ‘মুক্তিবাহিনী’। অপরদিকে সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, স্বেচ্ছাসেবী এবং আপামর জনসাধরণকে নিয়ে গেরিলা পদ্ধতির আদলে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় ‘গণবাহিনী’। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সকল বাহিনীকেই তাঁদের সদস্যদেরও প্রচলিত অর্থে মুক্তিবাহিনী এবং ক্ষেত্র বিশেষে ‘মুক্তিফৌজ’ নামে অভিহিত করা হতো। ১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচলনায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সমগ্র ভূখণ্ডকে ১১টি রণক্ষেত্র বা সেক্টরে ভাগ করা হয়। যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাকে। বাংলাদেশ ফোর্সেসের অধীনে যে ১১টি সেক্টরকে বিভক্ত করা হয়, সেই সেক্টরসমূহের দায়িত্বে ছিলেনঃ

১নং সেক্টর – মেজর জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে মেজর রফিকুল ইসলাম।

২নং সেক্টর – মেজর খালেদ মোশারফ এবং পরবর্তীতে মেজর এ.টি.এম. হায়দার।

৩নং সেক্টর – মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ এবং পরবর্তীতে মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান।

৪নং সেক্টর – মেজর সি.আর. দত্ত ।

৫নং সেক্টর – মেজর মীর শওকত আলী।

৬নং সেক্টর -স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার-(সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও মহকুমা।)

৭নং সেক্টর – মেজর নাজমুল হক, এবং পরবর্তীতে মেজর কাজী নূরুজ্জামান

৮নং সেক্টর – মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরবর্তীতে মেজর এম.এ. মনজুর

৯নং সেক্টর – মেজর এম.এ. জলিল এবং পরবর্তীতে মেজর জয়নুল আবেদীন

১০ নং সেক্টরের কোনো আঞ্চলিক সীমানা ছিলো না। এটি নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত ছিলো। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে এদেরকে পাঠানো হত ।

১১নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর আবু তাহের এবং পরবর্তীতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. হামিদুল্লাহ

টাংগাইল সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন-কাদের সিদ্দিকী-সমগ্র টাংগাইল জেলা এবং ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার কিছু অংশ। আকাশপথ-বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমার দায়িত্বে ছিলেন-গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার।

এছাড়া কর্নেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেছিলেন, যেগুলোর নামকরণ করা হয়ছিলো, তাদের অধিনায়কদের নামের অধ্যাক্ষর দিয়ে (এস ফোর্স, কে ফোর্স এবং জেড ফোর্স) [তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষ]

গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। যুদ্ধের আট মাস পর ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা দ্রুত নিজেদের সুসংগঠিত করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। সেদিন কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে স্থল, নৌ ও আকাশপথে চালানো হয় ত্রিমুখী আক্রমণ। উন্মুক্ত হয় বিজয়ের পথ। এই আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে সফলতা লাভ করে। তারা বাধ্য হয় পশ্চাদপসরণে। সুশিক্ষিত একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে সূচিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের ইতিহাস। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজয়ের লজ্জা এড়াবার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক সংঘর্ষে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ৩ ডিসেম্বর ভারতে বিমান হামলার মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অতঃপর মিত্রবাহিনীর সহযোগে ঘোষিত হয় সার্বিক যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতি ছিনিয়ে আনে চূড়ান্ত বিজয়। প্রকৃতপক্ষে এ বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের সম্মিলিত আক্রমণ। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে। ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে এ দিবসটিকে সশস্ত্রবাহিনী দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। দিনের শুরুতেই ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত শিখা অনির্বাণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণের পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেলে সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, বিরোধী দলীয় নেতা এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ সংবর্ধনায় সমবেত হন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীতে বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য সেনা-সদস্যদেরকে বিভিন্ন খেতাব প্রদান করা হয়। অন্যান্য সেনানিবাস, নৌ ও বিমানঘাঁটিতে অনুরূপ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ বেতার ও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে অনির্বাণ নামীয় বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড় পত্র প্রকাশ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রধানমন্ত্রী ও তিন বাহিনী প্রধান কর্তৃক বিভিন্ন উপহারে পুরস্কৃত করা হয়। সকল সেনানিবাস, নৌ ও বিমান ঘাঁটিতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সেনাবিভাগের প্রকাশনা থেকে যুদ্ধ ও সামরিক বাহিনী সম্পর্কীয় বিশেষ প্রবন্ধ নিবন্ধ সহযোগে প্রকাশনা বের করা হয়।

১৯৭১ সালের ২১ শে নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিত হয়েছিল জনতার সঙ্গে। সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অর্থাৎ জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি উদ্দীপক এবং মাইল ফলক। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় কতখানি অগ্রগামী সে বিবেচনার ভাড় আপনাদের উপর অর্পণ করা হল। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা এ দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী। শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকান্ড বিশ্বের সব দেশের চাইতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সিওয়ারিলিয়ন, লাইবেরিয়া, আইভরিকোস্ট, কঙ্গো, হাইতি, লেবানন, সোমালিয়া, দক্ষিন সুদান, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী শান্তি রক্ষার পাশাপাশি ওই সব দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং অসহায় মানুষের পুনর্বাসনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে। জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অবদান আজ সর্বজনস্বীকৃত। সশস্ত্র বাহিনী এমনি এক বাহিনী যার প্রতি এ দেশের জনগণের রয়েছে অগাধ আস্থা, বিশ্বাস ও ভালবাসা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ছাড়াও দেশের অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি করণ, এবং অন্যান্য জনকল্যাণমুখী কাজে প্রতিনিয়ত সশস্ত্র বাহিনী নিবেদিতপ্রাণ। ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরী, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডএ্যাবল পাসপোর্টসহ জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস নির্মাণ এবং ২০২০ সালে করোনা মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবজনক।

এর আগে সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ, নৌ-বাহিনী ১০ই ডিসেম্বর এবং বিমান বাহিনী-তে ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবসগুলো পালন করা হত। পরে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে, সম্মিলিতভাবে প্রতি বছর ‘২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে আমরা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে প্রতিবছরে দিবসটি পালন করে এসেছি। অবসরে এসেও আমাদের এই স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ রিটায়ার্ড আমর্ড ফোর্সেস সোলজারস (রাস) ওয়েলফেয়ার সোসাইটি সারা দেশের উপজেলা ও জেলা সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি বছরেই ঐতিহ্যমণ্ডিত দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে। মহান আল্লাহ আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদেরকে সর্বদাই দেশ, জাতি তথা সমাজের কল্যাণে নিবেদিত হিসেবে কর্মক্ষম রাখুন। আমিন। আল্লাহ হাফেজ।

সংকলনে-

সার্জেণ্ট মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম ইএমই (অব.)
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, ঢাকা।
বাংলাদেশ রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস সোলাজারস (রাস) ওয়েলফেয়ার সোসাইটি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category